Masudul Haque

On a quest for a better world

মর্যাদার মাপকাঠি

আমার স্কুল জীবনের সব থেকে কাছের বন্ধুকে হঠাত ফেসবুকে মেসেজ দিয়ে বললাম “দোস্ত স্কুলের অমুক স্যারের কথা মনে আসে? ঐযে তোকে আর আমাকে একসাথে মারসিল? অর ফেসবুক প্রফাইল পাইসি।

বন্ধুঃ “হুম, মনে আসে। তুই আইডিটা দে আমারে।”

আমিঃ “এইযে নে। আমি একটু পরে চ্যাটে আসতেসি, গালিগালাজ করুমনে।“

অতঃপর আমরা দুই বন্ধু মনের সুখে, ক্লাস সেভেন এর একটি দিনের কথা মনে করে, বেশ কিছুক্ষন ওই শিক্ষকের চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করলাম।

উপরের লিখা টুকু আমার সে বন্ধু এবং আমাকে দুইজন খারাপ মানুষ হিসাবে প্রমান করে। কিন্তু এর অন্তরালের ব্যাপারটা আসলে বেশ গভীর। ঐ শিক্ষক শাসনের নামে আমাদের সাথে যেমন ব্যবহার করেছিলেন, সেটাকে শাসন না বলে একজন ব্যর্থ ব্যাক্তির জীবনের ব্যর্থতার বহিপ্রকাশ বললে ভাল হয়। তারই প্রতিফলন ঐ শিক্ষকের ফেসবুকের সর্বশেষ পোস্টের ভাষাতেই আমরা দেখতে পাই। তিনি ঠিক কি লিখেছেন এটা আমি এখানে বলতে চাইনা।

আমাদেরকে ছোটবেলাতে এই শিক্ষা দেয়া হয় যে বাবা-মা এর পরই শিক্ষকের মর্যাদার স্থান। মর্যাদা এমন একটা জিনিষ যেটা অর্জন এবং রক্ষা করার দায়িত্ব আপনার নিজের। কিন্তু ছাত্র জীবনের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শিক্ষককে দেখেছি যারা অনেকটা জোড় করেই মর্যাদা লাভ করতে চাইতেন। কিংবা ছাত্রদের কে বিভিন্ন কারনে অপমান করে অথবা হেয় করে নিজের মর্যাদা বাড়ানোর চেষ্টা করতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় এক শিক্ষক পেয়েছিলাম যিনি তার ক্লাসের অর্ধেক সময় উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা যে গাধা-গরু এটা প্রমান করতে ব্যস্ত থাকতেন। আমি এধরনের শিক্ষকদের বলতে চাই, আপনারা মর্যাদা অর্জন করে নিন এবং নিজেদেরকে দেবতা ভাবা বন্ধ করুন।

সব শিক্ষকই এমন নয় এবং সব ছাত্রছাত্রী মাটির মানুষ ঠিক তাও নয়। এখনও অনেক শিক্ষকের রিক্সার পিছনে ছুটে যাই একটা সালাম দেয়ার জন্য। কখনও নিজের রিক্সা থেকে লাফিয়ে নেমে যাই অনেক শিক্ষকদের সাথে একবার করমর্দন করার জন্য। এখনও বন্ধুদের আড্ডাতে অনেক শিক্ষকের কথা একবার না উঠলে আড্ডা জমেনা। আজ যে বন্ধুর সাথে বসে ঐ শিক্ষকের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করলাম, তার সাথেই স্কুলজীবনে অন্য এক শিক্ষকের পক্ষে আমরা ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন করেছি। রাজনৈতিক কারনে ঐ শিক্ষককে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ থেকে বহিস্কার করা হয়। সেদিন স্কুলের কয়েক শত ছাত্র স্কুলের বাইরে মিছিল করে এর বিরুদ্ধে। কিন্তু ঐ শিক্ষক ছুটে এসে আমাদের বলেন, “বাবা আজকে তোমরা যদি মিছিল করো তাহলে সবাই ভাববে, আমি তোমাদের দিয়ে এসব করাচ্ছি। তোমরা আমার মানসম্মান রাখতে ক্লাসে ফেরত যাও।“ আমরা স্যারের কথা রেখেছিলাম। সবাই ক্লাসে ফেরত গিয়েছিল।

স্কুলজীবনে তিনিই আমাদেরকে সব থেকে বেশি শাসন করেছেন। কিন্তু স্কুলের শেষ দিন ছাত্রদের জড়িয়ে ধরে স্যারের এবং স্যারকে জড়িয়ে ছাত্রদের কান্না দেখে সেদিন তাকে আমাদের শিক্ষক মনে হয়নি। মনে হয়েছে একজন বাবা তার সন্তানদের আঁকড়ে ধরে কাদছেন।

সব থেকে মোটা বেতওয়ালা শিক্ষকের জন্য বেশি আবেগি হয়ে পরলাম। কাঁকতলিও ভাবে, ফেসবুকের ঐ শিক্ষকের ব্যবহারিত বেতটি আবার বেশ চিকন ছিল। শিক্ষকদের মর্যাদার মাপকাঠি কি তাহলে বেতের পুরুত্বে? এই প্রশ্নের জবাব লিখাটি যারা পড়লেন তারা ভাল বলতে পারেন।

জুন ২৯, ২০১৭

মধ্য বাসাবো, ঢাকা।

Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments