Masudul Haque

On a quest for a better world

অভিন্ন শৈশবের খোজে

আপনার বাসায় যদি কোন বারান্দা থাকে তাহলে সময় পেলে বারান্দায় বসে রাস্তাঘাটের মানুষকে অবসার্ভ করবেন। জীবনের কঠিন বাস্তবতা সম্পর্কে এমন কিছু ধারণা পাবেন যেগুলা অনেক বইপত্র পড়লেও জানতে পারবেন না। আমার কৈশোর শেষ হওয়া পর্যন্ত আমরা নিচতলা বাসায় থাকতাম। বারান্দায় বসে রাস্তার মানুষ দেখা ছিলো আমার ডেইলি রুটিনের অংশ। রাস্তার মানুষের মধ্যে অনেক স্বাভাবিক ব্যাপার যে অস্বাভাবিক ছিল তা আমি বড় হওয়ার পর বুঝতে পারি। যেমন ধরেন সব সময় লক্ষ্য করতাম আমাদের বাসার কাছের একটি বস্তির কিছু মানুষ সারাদিন আমাদের রাস্তায় বিভিন্ন জায়গায় বসে থাকতো। কিছুদিন পর বুঝতে পারলাম এরা সবাই একটি পরিবারের সদস্য। পরিবারটিতে একজন সত্তরউর্ধ্ব বয়স্ক ব্যক্তি, তার স্ত্রী, তার দুই ছেলে, তাদের বউ এবং নাতি নাতনিরা ছিলো। ব্যক্তির ছেলেরা কখনও কখনও এলাকায় তরকারি বিক্রি করতেন। বিক্রি শেষে অনেক সময় আমাদের বাসার সামনে বসে রেস্ট নিতেন। নাতি নাতনীরা আমাদের রাস্তায় খেলাধুলা করতো। আমি এই পরিবার এবং তাদের কর্মকান্ড বারান্দা থেকে অবসার্ভ করতাম। কিন্তু আমি তখনও বুঝতাম না উনারা কেনো সারাদিন রাস্তায় বসে থাকেন? কেনো এই পরিবারটি বাসায় যাচ্ছেনা? আমি বুঝতে পারতাম না যে হয়তো তারা রাতে খুব মানবেতর পন্থায় একটা ছোট রুমের মধ্যে শুধু ঘুমাতে যান। বস্তি গুলোর অবস্থা তখন এমনই ছিলো। এখনও এমনই আছে।

লিখার মূল বিষয়বস্তু আমি আরেকটু ন্যারো ডাউন করতে চাচ্ছি। উপরে যে পরিবারটির কথা লিখলাম, এই পরিবারের নাতনীটির নাম ছিলো আশা (ছদ্মনাম)। আশার বয়স ছিলো আনুমানিক পাঁচ বছর। হেংলা পাতলা, খুব মায়াময় হাসিওয়ালা, শুধু হাফপ্যান্ট পরে খালি পায়ে ঘুরে বেড়ানো এক শিশু। ধনী পরিবারে জন্ম হলে আশাকে এক বাক্যে কিউট বাচ্চা উপাধি দেয়া হতো। আশা মাঝে মাঝে আমাদের বাসায় আসত ময়লা ফেলতে যাওয়ার জন্য। প্রতিবার ময়লা ফেলার জন্য আশা দুই টাকা করে পেতো। আপাত দৃষ্টিতে আশা লাভবান হলেও, এখন আমার কাছে ব্যাপারটা একটি অপরাধ বলে মনে হয়। যে কাজটি দশ বছর বয়সী আমি করতাম না, সে কাজটি পাঁচ বছর বয়সী আশা কেন করবে? ময়লা ফেলতে যাওয়ার পথে রাস্তায় কোন বিপদ আছে কিনা, ডাস্টবিনের আসেপাশে কোন বিপদজনক রাসায়নিক দ্রব্য পড়ে আছে কিনা, আশার পরিবার তাঁকে জোর করে আমাদের বাসায় পাঠাচ্ছে কিনা, এই ফ্যাক্টর গুলো কখনও চিন্তা করা হতোনা। তখনকার সমাজ আমাদের এটাই শেখাতো যে আমার জন্য যেটা বিপদজনক, আশার জন্য সেটা বিপদজনক না। কারণ এই মুহূর্তে আশার পরিবারের টাকা দরকার। তাই সমাজ আমাদের এই ধারণা দিত যে আশাকে দুই টাকা দিয়ে আমরা এক মহান কাজ করছি। কিন্তু আশা কেনো স্কুলে গেল না, কেনো খালি পায়ে ঘুরাফেরা করছে, কেনো গায়ে জামা নেই, কেনো রাতের বেলাতেও ময়লা ফেলতে যেতে চাচ্ছে, এই প্রশ্ন গুলো কেউ কোনদিন করেনি। আশার সাথে সব সম্পর্ক ওই দুই টাকার নোট দেয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো। মা খালারা আশাদের হাতে ময়লার ব্যাগ দিয়ে, হাত ধুয়ে আমাদের মাথায় হাত বুলাতেন। আমাদের লুলাবাই শুনাতেন অথবা আয়তুল কুর্সি পড়ে ফু দিতেন। আমরা নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়তাম। আর আশারা থাকতো ময়লার ব্যাগ হাতে ডাস্টবিনের পথে।

পরিবারের দরিদ্রতা মিটাতে এখনও শিশুশ্রমকে আমাদের দেশে স্বাভাবিক ভাবে দেখা হয়। কোন পরিবারে বাচ্চা থাকলে তার দেকভালের জন্য একজন শিশু গৃহকর্মী রাখা আমাদের দেশে খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। কখনও নিজের বাচ্চার সাথে শুধু সময় কাটানোর জন্য আরেক বাচ্চাকে গৃহকর্মী (পড়ুন গৃহবন্দি) করে রাখা হয়। আপনি যতই তাঁকে টিভি দেখতে দেন, ভালো খাবার দেন, ভালো পোশাক দেন, তবুও আপনি জানেন যে এই শিশু গৃহকর্মী তিলে তিলে তার শৈশবকে হারাচ্ছে। এই শিশুশ্রম শুধু বাসার কাজের মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন কলকারখানায় এবং গার্মেন্টসে অসংখ্য শিশু কাজ করে। যারা সুযোগ পেলে আমাদের বাচ্চাদের মতো স্কুলে যেতো। যারা সুযোগ পেলে আমাদের বাচ্চাদের মতো একটা সাভাবিক জীবন যাপন করতো। কিন্তু দরিদ্রতার কারণে তাদের জীবনটা ভিন্ন। তাদের এই ভিন্ন জীবনে আপনার নিজ সন্তানকে একটু কল্পনা করে দেখুন। কল্পনা করুন আপনার শিশুসন্তান আশার মতো ময়লা ফেলতে যাচ্ছে। কল্পনা করুন আপনার শিশুসন্তান জং ধরা লোহালক্কর হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছে। কল্পনা করুন আপনার শিশুসন্তান ট্যানারিতে বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে চামড়া ধুচ্ছে। এবং কল্পনা করুন আপনার সন্তানের কোন ভবিষ্যৎ নেই, সে কখনও আর স্কুলে যাবেনা। পরিশেষে সে কখনও দরিদ্রতার কষাঘাত থেকে বের হয়ে আসতে পারবেনা। আমি আপনাকে চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, আপনি কল্পনা করতে পারবেন না। আপনি সহ্য করতে পারবেন না এই ভয়ঙ্কর চিন্তা গুলো।

যে জীবন আমার সন্তানের জন্য চাইনা, সে জীবন থেকে অন্যের সন্তানকে বাচাতে হবে। শিশুশ্রমকে নীরব সম্মতি জানানো বন্ধ করতে হবে। দেশে ওয়ার্ল্ড ক্লাস কিন্তু অ্যাফর্ডেবল ডে কেয়ার সেন্টার করতে হবে, যাতে আমাদের সন্তান দেখভাল করতে গিয়ে অন্যের সন্তানের শৈশব ধ্বংস না হয়। কলকারখানা-গার্মেন্টসে সব রকম শিশুশ্রম বন্ধ করে, শিশুদের স্কুলে ফেরত পাঠাতে হবে। এদের হারানো শৈশব ফেরানো নিশ্চিত করতে হবে। দরিদ্রতার জন্য যেসব পরিবার তাদের শিশুসন্তানদের কাজ করাতে বাধ্য করায়, তাদেরকে সাপোর্ট করার ব্যবস্থা করতে হবে। এইসব উদ্যোগ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্নভাবে হয়তো বাস্তবায়ন হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবায়ন অনেক অনেক বড় পরিসরে হতে হবে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমরা আরেকটু সচেতন হওয়ার চেষ্টা করতে পারি। সকল শিশুর সমান অধিকার চাই, এই দাবি বুকে ধারণ করতে পারি। পরিবর্তনের শুরু হবে আমাদের হাত ধরেই।

13 responses to “অভিন্ন শৈশবের খোজে”

  1. overnight buy androxal

    cheap androxal cheap in uk

  2. order cheap rifaximin online

    buy rifaximin generic uk buy

  3. acheter kamagra beau pharmacie pas

    kamagra commande en ligne sans ordonnance

  4. order enclomiphene canada mail order

    buy cheap enclomiphene france where to buy

  5. online order dutasteride singapore where to buy

    buy dutasteride tablets australia

  6. order flexeril cyclobenzaprine toronto canada

    flexeril cyclobenzaprine with no perscriptions

  7. gabapentin free fedex shipping

    how to order gabapentin cheap fast shipping

  8. purchase fildena canadian discount pharmacy

    order fildena with no prescription

  9. ordering itraconazole cheap uk

    buy cheap itraconazole cost without insurance

  10. ordering staxyn generic europe

    online order staxyn generic canadian

  11. cheap avodart cheap online no prescription

    order avodart buy in london

  12. buy cheap xifaxan cheap australia

    xifaxan no script needed cod overnight

  13. koupit kamagra online bez lékařského předpisu

    kupte si kamagra žádný skript

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *