তাকাব্বাল আল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম। পবিত্র রামাদান মাস পালনের পর এলো খুশির ঈদ। মহান আল্লাহ তাআলার তরফ থেকে পুরুস্কার বিতরণীর এই দিনে, সবাই উত্তম পুরুস্কার লাভ করুক, এই দোয়া করি।
ঈদের মৌসুম আসলেই ছেলেবেলার ঈদের অনেক স্মৃতি মনে পড়ে। বাংলাদেশে রোজার ঈদের স্মৃতির সব থেকে বড় অংশ ঈদের জামাত পড়তে বায়তুল মুকাররমে যাওয়া। সকালে ঠান্ডায় কাপতে কাপতে গোসল করে পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে আব্বার সাথে বের হয়ে পরতাম। যে রিক্সা হাতের নাগালে পেতাম সেটা নিয়েই আমরা রওনা হতাম বায়তুল মুকাররমে। পথে আমাদের মতো পাঞ্জাবি-টুপি পরা, জায়নামাজ হাতে অসংখ্য মানুষ যে যেভাবে পারে মসজিদের পথে ছুটত। সবাই একই কাজে একই পথে চলার একটা অন্যরকম উত্তেজনা অনুভব করতাম।
বায়তুল মুকাররমে পৌঁছে ভেতরে ঢুকে ঈমাম সাহেবকে দেখা যায় এমন একটা জায়গা খুঁজে বসার চেষ্টা করতাম। ঈদের জামাত শুরুর আগে সব হুজুর সংক্ষিপ্ত একটি বয়ান দিতেন। বয়ানের প্রধান বক্তব্য প্রতি বছর একই ছিলো। ত্রিশ দিন সিয়াম পালন শেষে আজ আল্লাহর কাছ থেকে পুরুস্কার গ্রহণের জন্য আমরা হাজির হয়েছি। প্রতিবছর এই কথাটা শোনার অপেক্ষা করতাম। এর মধ্যে কেমন জানি একটা ভালো লাগা কাজ করত। বয়ান শেষে হুজুর নামাজ শুরুর আগে বরাবরের মতো কাতার সোজা করে দাঁড়াতে বলতেন। কখনও অতিরিক্ত ছয় তাকবিরের কথা মনে করিয়ে দিতেন নামাজের সময় বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য। শেষ বারের মতো বলতেন নামাজ শুরু হচ্ছে।
বায়তুল মুকাররমের মাইকের অবস্থা খুব একটা ভালো ছিলনা। মাইকে হুজুর কথা বললে অনেক ইকো হতো, শব্দ ক্রিস্টাল ক্লিয়ার শোনা যেতোনা। তারপরও এমন গুরুগম্ভীর কুরআন তেলওয়াত আমার কাছে ঐশ্বরিক মনে হতো। হাজারো মানুষের সেজদায় যখন মসজিদ প্রকম্পিত হয়ে উঠত, এক অজানা ভালো লাগায় শিউরে উঠতাম। নামাজ শেষে অনেকে চলে গেলেও আমরা অপেক্ষা করতাম খুতবা এবং মুনাজাত শেষ হওয়া পর্যন্ত। মুনাজাত শেষ হলেই কেবল ঈদের কোলাকোলি করার একটা অলিখিত নিয়ম ছিলো আমাদের। নামাজ শেষে ঘরে ফেরার পথে দান-খয়রাত করা, বাচ্চাদের জন্য বেলুন কেনা ছিলো আরেক পশলা আনন্দ।
এখনকার চিত্রটা আমার জন্য বেশ ভিন্ন। বিদেশ বিভূইয়ে ঈদের জামাতের সেই জৌলুশ নেই। রাস্তাঘাটে মানুষের মধ্যে সেই ব্যস্ততার চিত্র নেই। ভিনদেশী ভাষায় বয়ান হলে হুজুর কখন পুরুষ্কার নেবার কথা বলে সেটাই বুঝিনা। তারপরও ঈদের জামাতে যাই এই আশায় যে আল্লাহ তাআলার পুরুষ্কার তো জগতের সব কোনেই পৌঁছায়। খুব ভিন্ন এক ঈদের জামাত পড়ি আর স্মৃতির পাতায় ঘুরে ফিরি বায়তুল মুকাররমে।
ছোটবেলার ঈদের তুলনায় বড়বেলার ঈদ হয়তো কিছুটা মলিন। তারপরও ঈদ শুধুই আনন্দ বয়ে আনুক। ভিন্ন এক সময়ে, ভিন্ন এক পরিবেশে, ঈদের আনন্দ থাকুক বহমান। সকল বন্ধুবান্ধব, পরিবারবর্গ, কাছে-দুরের সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাই।
ঈদ মুবারক।
https://hrv-club.ru/forums/index.php?autocom=gallery&req=si&img=6884